, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ , ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


মাশরাফির কন্যা হুমায়রার সেলফিতে মার্টিনেজ

  • আপলোড সময় : ০৩-০৭-২০২৩ ০৮:০৩:৪৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৭-২০২৩ ০৮:০৪:৩০ অপরাহ্ন
মাশরাফির কন্যা হুমায়রার সেলফিতে মার্টিনেজ
বাংলাদেশে এমি মার্তিনেসের সংক্ষিপ্ত সফরের একটি অংশ ছিল পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্ব। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে মাশরাফিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই আয়োজনে। দেশের এই ক্রিকেট নায়ক তো ছেলেবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত। দুই সন্তানকে সঙ্গী করে তিনি গিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক শোনালেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কথা ও তাকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা।

“এমি মার্তিনেসের সঙ্গে দেখা করতে যাব, এটা শোনার পর থেকেই আমার দুই সন্তান হুমায়রা ও সাহেল উত্তেজনায় একরকম টগবগ করে ফুটছিল। গত বিশ্বকাপ ওরা খুব গভীরভাবে দেখেছে তো, সেই রোমাঞ্চ এখনও আছে ওদের। এমির সঙ্গে দেখা করা নিয়ে কত যে প্ল্যান সাজাচ্ছিল ওরা! গতকাল রাতে তো ওরা ঘুমাতেই পারছিল না, রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে ছিল আর নানা কিছু বলছিল আমাকে। বললাম, ‘ঘুমাচ্ছিস না কেন? ওরা বলে, ‘বাবা, এত এক্সাইটেড লাগছে যে ঘুমাতে পারছি না।”

“সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। একেবারে পাগল ও খ্যাপাটে সমর্থক যাকে বলে। কত পাগলামো করেছি আর্জেন্টিনাকে নিয়ে! এখনও কম করি না। তবে সত্যি বলতে, আর্জেন্টিনার তারকাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যে পাগল হয়ে আছি, এমন নয় মোটেও। আর্জেন্টিনা দল ও লিওনেল মেসি যখন এসেছিল, এত বড় ভক্ত হয়েও আমার খুব ইচ্ছে করেনি যেতে বা কাছ থেকে দেখতে। তাদের প্রতি প্রবল সমর্থন আর ভালোবাসা আছে, সেটা নিজের মতো করেই আমি করতে পছন্দ করি। কাছাকাছি যাওয়া বা সামনাসামনি দেখাটা আমাকে অতটা টানে না। এমি মার্তিনেসের ক্ষেত্রেও সেটা সত্যি। নেক্সট ভেঞ্চার্স থেকে আমন্ত্রিত হওয়ায় দারুণ সম্মানিত বোধ করেছি অবশ্যই। তবে আমার সন্তানদের আগ্রহ দেখেই মূলত আমি যেতে আগ্রহী হয়েছি। ওদের উৎসাহ, রোমাঞ্চ দেখতে ভালো লাগছিল।”

“আজকে নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে এমির সঙ্গে আমাদের আয়োজনটি শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। হুট করে ওরা জানাল, আয়োজনের সময়টা এগিয়েছে। ৯টার দিকেই ওখানে চলে যাবেন এমি। আমরাও তাড়াহুড়ো করে প্রস্তুত হয়ে বের হলাম।”

“নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে এমির সঙ্গে আমার ও পলক ভাইয়ের (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক) একটি সাক্ষাৎকার পর্ব ছিল। আমি বাড্ডার দিকে পৌঁছে যাই দ্রুতই। তবে নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয় খুঁজে বের করতে একটু দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হয়ে যায়। পলক ভাই চালিয়ে নেন। আমি সেটা মিস করে ফেলেছি।”

“পরে পলক ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন এমির সঙ্গে। হাসিমুখে করমর্দন করে সে বলল, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেট তো খুব জনপ্রিয়, না?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, তবে ফুটবলও খুব জনপ্রিয়, আর্জেন্টিনাও অনেক জনপ্রিয়।’ এখানে আর্জেন্টিনা যে দারুণ জনপ্রিয়, তা অবশ্য এখন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা মনে হয় সবাই জানে ভালো করেই।”

“ওখানে অনেক ভিড় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এমিকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, সেলফি চায়, অটোগ্রাফ চায়, একটু ছোঁয়া চায়, কথা বলতে চায়। আলাদা করে তাই খুব বেশি সময় কথা বলার সুযোগ পাইনি। তবে যতটুকু কথা হয়েছে, বলেছি যে এখানে আর্জেন্টিনার ক্রেজ কতটা। বিশ্বকাপ জয়ের পর আমরা যেভাবে লাফিয়েছি, মজা করেছি, সেসব ছবি ও ভিডিও তাকে দেখালাম। বাংলাদেশের নানা জায়গায় উদযাপনের ছবিও দেখালাম।”

“হুমায়রা ও সাহেলের খুবই শখ, এমির অটোগ্রাফ নেবে, ছবি তুলবে। এত এত লোকের আব্দার সেখানে সে মেটাচ্ছে, একটু বিব্রতই লাগছিল বলতে। তবু বাচ্চাদের কথা ভেবে তাকে বললাম। সে তো খুবই আন্তরিকভাবে সাড়া দিল। বলল যে, ‘ওপাশে ঘুরে এসেই দিচ্ছি।’ পরে ঠিকই নিজ থেকেই এসে অটোগ্রাফ দিল, ছবি তুলল। সাহেল নিজের টি-শার্টে অটোগ্রাফ নিল। হুমায়ারা আর্জেন্টিনার জার্সি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। ওরা তো ব্যাপক খুশি। ওদের খুশি দেখে আমারও ভালো লাগছে। ফেরার পথেও ওরা অটোগ্রাফের জায়গাটায় বারবার চুমু দিচ্ছিল, ছবি দেখছিল একটু পরপরই। ওদের জীবনে এটা বড় স্মরণীয় ঘটনা।”

“আমি নিজে ছবি-টবি তুলিনি। এটা আসলে আমি খুব একটা উপভোগ করি না কখনোই। আমার পছন্দের বা প্রিয় অনেক তারকার সঙ্গেই আগে যখন দেখা হয়েছে, বেশির ভাগ সময়ই ছবি তুলিনি বা নিজে থেকে ছবি তোলার কথা বলিনি। কে কখন কোন অবস্থায় থাকে, মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, এসব তো বলা কঠিন। কেবলই মনে হয়, তাদের যদি মুুড ভালো না থাকে এবং যদি এমন কিছু বলে ফেলে বা করে ফেলে, যা আমার ভালো লাগবে না, তাহলে তারকাকে নিয়ে আমার অনুভূতিতে চোট লাগবে। এবারও তাই ছবি তুলিনি নিজে। অন্যরা তুলে থাকতে পারেন।”

“তবে যেটুকু কথা বললাম আর ২০ মিনিটের মতো কাছ থেকে দেখলাম, এমিকে একদমই সাদাসিধে মনে হলো। তারকাসুলভ কোনো ব্যাপার বা বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপারের মতো সেরকম কোনো আচরণ দেখিনি বা তার কথায় ও শরীরী ভাষায় বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি। খুব সহজেই সবার সঙ্গে মিশছে, কথা বলছে, আব্দার মেটাচ্ছে।”

“যদি ইন্টারভিউ পর্বটায় থাকতে পারতাম, দুটি প্রশ্ন করতাম তাকে। প্রথমটি বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ মুহূর্তে তার সেই সেভটি নিয়ে। কোলো মুয়ানির যে শটটি তিনি অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দিয়েছিলেন পা দিয়ে। ওই গোলটি হলে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ওখানেই শেষ। পরে জেতার পর মনে হয়েছে, আর্জেন্টিনা জিতে গেছে আসলে ওখানেই। এমিকে প্রশ্ন করতাম, ‘ওই শট ঠেকানোর মুহূর্তে এবং পরপরই মাথায় কি খেলা করছিল?’ দ্বিতীয় প্রশ্নটিও করতাম এই শট ঠেকানো নিয়েই যে, ‘ওই গোলটা বাঁচানোর পর টাইব্রেকারে যাওয়ার সময় কি এরকম কিছু মনে হচ্ছিল যে, আজকে আমারই দিন, টাইব্রেকারেও ঠেকিয়ে দেব!’ শেষপর্যন্ত প্রশ্নগুলো করা আর হয়নি। তবে যা হয়েছে, সেটুকুই যথেষ্ট।”

“অনেক ভালো লাগা সঙ্গী করে ফিরলাম। ফেরার পথে মনে হচ্ছিল, এই যে উন্মাদনা, এত আবেগ, এটা তো শুধু আর্জেন্টিনাকে ঘিরে নয়, ফুটবলকে ঘিরেই। আমাদের প্রাণের খেলা ফুটবল, এই দেশের মানুষের রক্তে মিশে আছে ফুটবল। আমরা কেন পারব না বিশ্বকাপে খেলতে? কেন পারব না নিজের দেশের নাম ধরে চিৎকার করতে, বিশ্বকাপে নিজ দেশের পতাকা হাতে উল্লাস করতে! জানি, এখনকার বাস্তবতায় এসব অলীক কল্পনা মনে হতে পারে। তবে সদিচ্ছা আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে, কেন পারব না? স্বপ্ন দেখি, একদিন আমরাও বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলব এবং আমাদের তারকাদের ঘিরেও এমন উন্মাদনা থাকবে অন্যান্য দেশে।”
সর্বশেষ সংবাদ